দোয়ায়ে মাসুরা আরবি, অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফযিলত

নামাজ শেষ করার আগে দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করতে হয়। তারপর সালাম ফিরানো হয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানদের এই দোয়াটি শেখা উচিত। তবে কোন কারণে যদি কেউ ভুলে যায় তার জায়গায় অন্য দোয়াও পাঠ করা যায়। নামাজের যেসব স্থানে মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করেন তার মাঝে একটি হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। দোয়া মাসুরা হলো ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া। চলুন তাহলে এ গুরুত্বপূর্ণ দোয়ায়ে মাসুরা আরবি, অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফযিলত সম্পর্কে জেনে নেই –

দোয়ায়ে মাসুরা আরবি, অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফযিলত

দোয়ায়ে মাসুরা আরবি, অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফযিলত
দোয়ায়ে মাসুরা আরবি, অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ ও ফযিলত

দোয়ায়ে মাসুরা আরবি

 اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ

দোআ মাসূরা বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রাহীম।

দুয়া মাসুরা বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ ! আমি আমার নিজ আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি, গুনাহ মাফকারী একমাত্র আপনিই । অতএব আপনি আপনা হতেই আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন । নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু ।

দোয়া মাসূরা ইংরেজি অর্থ

0′ Allah! I have tormented myself much. There is none but you to forgive the sins. Therefore you forgive all of my sins. And have pity on me! Certainly you are the Great Forgiver and Benevolent.  

দোয়া মাসূরা পড়ার নিয়ম

দোয়া মাসূরা সাধারণত নামাযের শেষের দিকে শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াতু, দুরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর পড়ে থাকি । নামাযের নিয়ত বাঁধার পর সানা (সুবাহাকাল্লাহুম্মা) পড়তে হয় । এর পর সূরা ফাতিহা পড়তে হয় । এরপর সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হয়। তারপর রুকুতে গিয়ে সুবহা-না রব্বিয়াল আযিম পড়তে হয় । এরপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাড়াতে হয় । রুকু থেকে উঠে যদি ইমাম হয় তাহলে তাকে পড়তে হয়, ছামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ, আর মুত্তাকি হলে পড়তে হয় রাব্বানা লাকাল হামদ”। তারপর সিজদায় যেতে হয়, সেজদায় সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা পড়তে হয় । এমনভাবে দুই সেজদার পড় উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাঁধতে হয়।

তারপর আবার পূর্বের নিয়মে সূরা ফাতিহা পড়ে, আগের মত করে পরের রাকাত শেষ করতে হয় । এভাবে যদি দুই রাকাত নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাত পড়ার পরে বসে আত্তাহিয়াতু পড়তে হয় । তারপর দুরুদে ইব্রাহিম পড়তে হয় । তারপর সালাম ফেরানোর আগে এই দোয়া মাসুরা পড়তে হয়।

নামাজে দোয়া মাসুরা না পড়লে কি নামাজ হবে না?

নামাজের মাঝে ও দোয়ায়ে মাসূরা পড়া সুন্নত। নামাজের মাঝে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এমন এক কার্যাবলি বিষয়, যা ছেড়ে দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যায় না তবে বিনা অজুহাতে ছেড়ে দিলে নামাজ মাকরুহ হয়। কারন বষত ছেড়ে দেওয়া যায়।

ফরয নামাজ হোক, আর সুন্নত বা নফল নামাজই হোক না কেন, দোয়ায়ে মাসূরা ছেড়ে দিলে নামাজ হবে। কিন্তু কোন কারণ ছাড়া ইচ্ছেকৃতভাবে ছেড়ে দিলে গুনাহ হবে।

আর ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। যা হারাম কাজের কাছাকাছি। এর ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ না পাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই যেকোন নামাজেই দরূদ ও দুয়ায়ে মাসুরা ছেড়ে দেবার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।

নামাজের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ১২ টি। এগুলো হলো –

  • দুই হাত বাঁধা।
  • সানাপাড়া।
  • আউযুবিল্লাহ পড়া।
  • বিসমিল্লাহ পড়া।
  • আলহামদু শেষে আমিন বলা।
  • প্রত্যেক ওঠা বাসায় আল্লাহু আকবার বলা।
  • রুকুর তাসবিহ পড়া।
  • রুকু হইতে উঠিবার সময়ে সামিআল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বানা লাকাল হামদ বলা।
  • সিজদার তাসবিহ পড়া
  • দুরুদ শরীফ পড়া।
  • দোয়ায়ে মাসুরা পড়া।

দোয়া মাসুরার ফযিলত

ইসলামের ৫ টি রুকনের মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো নামাজ। এটি মানুষের জন্য ফরজ ইবাদাত। ফরজ নামাজ ছাড়াও ওয়াজিব, সুন্নাত, নফলসহ অনেক নামাজ রয়েছে। এসব নামাজে তাশাহহুদ, দরূদসহ অনেক দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বেও রয়েছে দোয়া। যা পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেকগুলো দোয়ার দিক-নির্দেশনা এসেছে। যার মধ্যে একটি দোয়া হলো মাসুরা।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, যে একবার হজরত আবু বকর (রাঃ) নবী (সাঃ)এর সেবায় হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দিন, যা আমি আমার নামাজের মধ্যে পড়বো। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তুমি বল,

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রাহীম।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ্‌! আমি আমার নিজ আত্মার উপর অনেক অত্যাচার করেছি, তুমিই একমাত্র গুনাহ মাফকারী; অতএব তুমি আপনা হইতে আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি দয়া কর। তুমি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

 


ত আজ এখানেই শেষ করছি। আমার এ পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

Leave a Comment